রোজার নিয়ত সম্পর্কে হাদিস

নিয়ত এটি আরবি শব্দ। এর শাব্দিক অর্থ হলো মনে মনে ইচ্ছা করা। নিয়ত পড়ার চেয়ে নিয়ত করা গুরুত্বপূর্ণ।

রোজা রাখার নিয়ত হলো সুবহে সাদিক হওয়ার পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সব প্রকার পানাহার এবং স্ত্রী মিলন থেকে বিরত থাকাকে রোজা বলে। (ফাতাওয়া আলমগিরি-১/১৯৪; রদ্দুল মুহতার-৩/৩৩০)

রোজার নিয়ত সম্পর্কে হাদিস

রোজার নিয়ত মুখে মুখে পড়তে পারেন আবার মনে মনে পড়তে পারেন। বাংলা আরবি যে ভাবে পড়েন পড়লেই হবে। তবে মুখে বলতে হবে এমন কোন কথা হাদিস নেই । হাদিসে আছে নিয়ত মানেই হলো কোন কাজের প্রতি ইচ্ছে পোষন করা।

বাংলায় পড়লেই হবে আমি আগামীকাল রোজা রাখার নিয়ত করিলাম, আল্লাহ তাআ’লা তুমি আমার রোজা কবুল করুন। এভাবে পড়লেই হয়ে যাবে।

হাদিস শরিফে এসেছে, রাসূল (সা.) বলেন-

إِنَّمَا الْأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ

‘সকল আমল নিয়তের উপর নির্ভরশীল।’ [সহিহ বুখারি, হাদিস: ১]

রোজার জন্য সাহরি খেলেও রোজার নিয়ত হয়ে যায়। আল বাহরুর রায়েক-২/২৫৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া- ১/১৯৫

প্রতিটি   কাজ   তার   নিয়তের   উপর  নির্ভরশীল। সকল কাজের আগে নিয়ত করতে হবে। সেটা মুখে বলতে হবে এমন কোন কথা না। অন্তরে বা মনে মনে পড়লেই হয়ে যাবে। নিয়ত মানেই হলো একটা কাজের প্রতি ইচ্ছে পোষন করা মাত্র।

রাতে সেহেরি খাওয়ার পরে রোজার নিয়ত করতে হয়, সেটা মনে মনে হক আর মুখে হুক। ইচ্ছে পোষন করলেই হশে যাবে। দিনে সূর্য ঢলার প্রায় এক ঘণ্টা আগে নিয়ত করলেও রোজা হয়ে যাবে। (সহিহ বোখারি : ২০০৭, বাদায়েউস সানায়ে : ২/২২৯)।

নিয়ত মানেই হলো ইচ্ছে পোষন করা। আর একজন ব্যাক্তি ইচ্ছে আছে বলেই সে সেহেরি খাবে রোজা রাখল এটা মুখে না বললেও রোজা হয়ে যাবে। রোজার কোন সমস্যা হবে না। ফরজ রোজার নিয়ত দিনের শেষ ভাবে পড়লেও হয়ে যাবে।

উম্মুল মুমিনিন হাফসা (রা.) বলেন, মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ফজরের আগে রোজা রাখার নিয়ত করবে না, তার রোজা (পূর্ণাঙ্গ) হবে না।’ (আবু দাউদ: ১ / ৩৩৩) 

রোজার নিয়ত করা ফরজ। নিয়ত অর্থ সংকল্প। যেমন-মনে মনে এ সংকল্প করবে, আমি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে আগামীকালের রোজা রাখছি। মুখে বলা জরুরি নয়। (সহিহ বোখারি : ১/২, বাদায়েউস সানায়ে : ২/২২৬)।

ফরজ রোজার নিয়ত রাতেই করা উত্তম। (সুনানে আবি দাউদ : ১/৩৩৩, বাদায়েউস সানায়ে : ২/২২৯)।

আমি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে আগামীকালের রোজা রাখছি। মুখে বলা জরুরি নয়। (সহিহ বোখারি : ১/২, বাদায়েউস সানায়ে : ২/২২৬)।

প্রত্যেক রোজার জন্য পৃথক নিয়ত করা জরুরি। প্রথম রোজায় পুরো মাসের নিয়ত করা যথেষ্ট নয়। (ফাতাওয়ায়ে রহিমিয়া: ২ / ১৫) আর যে ব্যক্তি পুরো রমজানই রোজা রাখা বা না রাখার কিছুই নিয়ত করেনি, তাহলে সে কাজা করে নেবে। (তাতারখানিয়া: ২ / ২৭১) 

ফজর উদয় হওয়ার আগেই অর্থাৎ রাতের মধ্যেই নিয়ত করে ফেলতে হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :

مَنْ لَمْ يُجْمِعْ الصِّيَامَ قَبْلَ الْفَجْرِ فَلاَ صِيَامَ لَهُ

যে ব্যক্তি ফজরের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার আগেই সিয়াম পালনের নিয়ত করল না তার সিয়াম শুদ্ধ হল না। (আবূ দাঊদ : ২৪৫৪)

مَنْ لَمْ يَبِيْتِ الصِّيَامَ مِنَ اللَّيْلِ فَلاَ صِيَامَ لَهُ

যে ব্যক্তি রাতের মধ্যেই সিয়ামের নিয়ত করল না তার সিয়াম শুদ্ধ হল না। (এ নির্দেশ শুধুমাত্র ফরয রোযার ক্ষেত্রে) (নাসাঈ : ৪/১৯৬)

আমরা জানতে পারলাম যে, রোজার নিয়ত সম্পৃক্ত হাদিস গুলো। রোজার নিয়ত  আমরা মুখেও বলতে পারি আবার মনে মনে ইচ্ছে পোষন করলেও হয়ে যাবে। নিয়ত রাতে পড়া উত্তম। রোজার নিয়ত মুখে বলতে হবে এমন কোন হাদিস নেই,  ইচ্ছে পোষন করলেই হয়ে যাবে।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *